বর্তমান সময়ে ড্রপশিপিং একটি লাভজনক ব্যবসা। ড্রপশিপিং এর মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এই পোস্টে ড্রপশিপিং করার জন্য কি কি প্রয়োজন হবে এবং কিভাবে আপনি ড্রপশিপিং এর মাধ্যমে আয় করবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ড্রপশিপিং কি?
ড্রপশিপিং একটি অনলাইন ব্যবসা যেখানে বিক্রেতা তার স্টোর বা ওয়েবসাইটে অনেকগুলো পণ্য যোগ করে রাখে তারপর বিভিন্ন উপায়ে পণ্যগুলোর মার্কেটিং করা হয়। যখন স্টোর থেকে পণ্যটি কেউ ক্রয় করে তখন সেই স্টোরের মালিক কম দামে পণ্যটি অন্য জায়গা থেকে ক্রয় করে বেশি দামে পণ্যটি তার কাস্টমারের কাছে বিক্রয় করে দেয়।
চিনে যদি একটি পণ্যের দাম ১০ ডলার হয় তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেই একই পণ্যের দাম ৩০ ডলার হবে। আর এখান থেকেই আসে মূলত ড্রপশিপিং ব্যবসার আইডিয়া। আপনি অনলাইনে একটি ড্রপশিপিং স্টোর ওপেন করবেন তারপর সেখানে কিছু প্রোডাক্ট এড করবেন তারপর উচ্চ আয়ের দেশগুলো যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য দেশগুলোতে আপনার প্রোডাক্টগুলোর বিজ্ঞাপন করবেন। উদহারণস্বরূপ বলা যায়, আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০ ডলারের একটি প্রোডাক্ট কেনার ওডার পেলেন তখন আপনি চীন থেকে ওই একই প্রোডাক্ট ১০ ডলারে কিনে আপনার কাস্টমারকে ৩০ ডলারে বিক্রয় করে দিলেন তাহলে আপনার কাছে মোট ২০ ডলার থাকলো তারপর সেই প্রোডাক্টটির ডেলিভারি খরচ বাবদ অন্য সব খরচ মিলিয়ে আপনার কাছে থাকা ২০ ডলার থেকে আরও ১০ ডলার খরচ হয়ে গেলো তারপর বাকি যেই ১০ ডলার থাকলো সেটাই আপনার মুনাফা। এইভাবেই মূলত ড্রপশিপিং ব্যবসা করা হয়ে থাকে।
ড্রপশিপিং কিভাবে শুরু করবেন?
যেকোন ব্যবসা শুরু করতে যেমন পুঁজির প্রয়োজন হয় ঠিক তেমনি ড্রপশিপিং শুরু করতেও আপনার কিছু অর্থের প্রয়োজন হবে। আপনার অনলাইন স্টোর বা ওয়েবসাইট সেটআপ করা থেকে শুরু করে প্রোডাক্টটি সেল করা পযন্ত কি কি হবে সেগুলো নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পণ্যের ক্যাটাগরি নির্বাচন করুন
ড্রপশিপিং শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই ঠিক করে নিতে হবে যে আপনি কি ধরণের পণ্য বিক্রয় করতে চান। পণ্যের বিভিন্ন ক্যাটাগরি আছে যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক পণ্য, বই বা ম্যাগাজিন, হেলথ রিলেটেড বিভিন্ন পণ্য, ফ্যাশন রিলেটেড বিভিন্ন পণ্য ইত্যাদি। আপনাকে অবশ্যই মার্কেট রিসার্চ করে পণ্যের ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। যে ধরণের পণ্যের চাহিদা মার্কেটে সবচেয়ে বেশি সেই ধরণের পণ্য বিক্রয় হওয়ার সম্ভবনাও সব চেয়ে বেশি সুতারং আপনাকে এই বিষয়টি নজরে রেখে পণ্যের ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। বর্তমানে কি ধরণের পণ্য ট্রেন্ড করছে এই সকল বিষয়ে রিসার্চ করার জন্য অনেক টুল আছে যেমন Google Trends আপনাকে পণ্যের ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে সাহায্য করবে।
আপনার নিজস্ব অনলাইন স্টোর তৈরী করুন
ড্রপশিপিং শুরু করতে হলে সর্বপ্রথম আপনার একটি অনলাইন স্টোরের প্রয়োজন হবে এবং সেই স্টোরের একটি সুন্দর নামের প্রয়োজন হবে। আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, স্টোরের নামটি আপনার ব্রান্ডের নাম আর ডোমেইনের নামটি আপনি কি ধরণের পণ্য বিক্রয় করবেন সেটির সাথে মিল রেখে রাখলে সেটি অনেক প্রফেশনাল দেখাবে এবং সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে সার্চ করলে যেন আপনার স্টোরটি সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় এসব বিষয় মাথায় রেখে আপনাকে একটি সুন্দর নামের ডোমেইন কিনতে হবে। তারপর আপনাকে Shopify বা Wordpress এর মাধ্যমে একটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট তৈরী করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আপনার ওয়েবসাইটটি যেন সুন্দরভাবে সাজানো - গোছানো থাকে এবং সেটি যেন সকল ডিভাইস থেকে সুন্দর ভাবে ভিসিট করা যায়। আপনি যদি ডোমেইন সেটআপ বা অনলাইন স্টোর বানাতে না পারেন তাহলে আপনাকে কিছু অর্থ খরচ করে একজন ডেভেলপারের সাহায্য নিতে হবে।
পণ্যের প্রতিযোগিতা গবেষণা করুন এবং পণ্যগুলোর জন্য ভালো সাপ্লাইয়ার খুজুন
আপনি যে পণ্যটি বিক্রয় করতে চাইছেন সেটি আর কত জন বিক্রয় করছে এবং কেমন দামে বিক্রয় করছে এগুলো নিয়ে অবশ্যই আপনাকে রিসার্চ করতে হবে। যদি প্রতিযোগিতা অনেক বেশি হয়ে থাকে তাহলে সেই পণ্যটি বিক্রয় করা আপনার জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়বে সুতারং প্রতিযোগিতা তুলনামুলুক ভাবে কম আছে এমন পণ্য আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। তবে আপনাকে এটিও মনে রাখতে হবে যে, আপনি যদি আপনার প্রতিযোগীদের তুলনায় পণ্যের বিক্রয়মূল্য অনেক বেশি রাখেন তাহলে পণ্যটির বিক্রয় হওয়ার সম্ভবনা অনেক কমে যাবে সুতরাং আপনার প্রতিযোগীদের বিক্রয়মূল্য নিয়ে রিসার্চ করার পর তারপর আপনাকে পণ্যের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
অবশেষে আপনাকে একটি ভালো সাপ্লাইয়ার খুঁজতে হবে যার পণ্যের গুনগত মান ভালো হবে। আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, একটি পণ্যের গুনগত মান যদি খারাপ হয় তাহলে ক্রেতা আপনার স্টোর থেকে দ্বিতীয়বার আর কোনো পণ্য কিনবে না। এতে করে আপনার স্টোরের নাম খারাপ হবে। সুতরাং আপনার পণ্যগুলোর সাপ্লাইয়ার খোঁজার সময় অবশ্যই আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে তার প্রোডাক্ট কোয়ালিটি কেমন। ভালো সাপ্লাইয়ার পাওয়ার পর আপনাকে পণ্যগুলো আপনার স্টোরে লিস্ট করতে হবে যাতে পরবর্তীতে ক্রেতা আপনার স্টোর থেকে সহজ ভাবেই পণ্যগুলো ক্রয় করতে পারে।
আরো পড়ুন : ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে কিভাবে আয় করা যায় বিস্তারিত জানতে নিচের পোস্টটি পড়ুন।
পোস্ট : ইমেইল মার্কেটিং কী? ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কিভাবে আয় করা যায়?
আপনার স্টোরের পণ্যগুলোর মার্কেটিং করুন
আপনার স্টোরে পণ্যগুলো লিস্ট করার পর সেগুলোকে বিক্রয় করার জন্য অবশ্যই আপনাকে মার্কেটিং করতে হবে। অনলাইনে পণ্যগুলো মার্কেটিং করার জন্য আপনাকে জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক যেমন গুগল, মেটা, টুইটার ইত্যাদির সহায়তা নিতে হবে। বিজ্ঞাপনে পণ্যটির আকর্ষণীয় ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করতে হবে এবং পণ্যটি কি কি কাজে ব্যবহৃত হয় ও এর গুনাগুন সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে যাতে বিজ্ঞাপনের দর্শক আপনার বিজ্ঞাপন দেখেই সির্ধান্ত নিতে পারে যে তার পণ্যটি প্রয়োজন কিনা।
আপনাকে আরও কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যেমন, আপনার স্টোরে অবশ্যই জনপ্রিয় পেমেন্ট মেথডগুলো যোগ করতে হবে যাতে কোনো ক্রেতা পণ্য ক্রয় করতে গেলে সহজেই পেমেন্ট করতে পারে। আর আপনাকে পণ্যের ডেলিভারি যত দ্রুত সম্ভব দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
ড্রপশিপিং এর মাধ্যমে আপনি প্রতিমাসে কি পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারবেন?
ড্রপশিপিং এর মাধ্যমে আপনি কি পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন সেটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আপনার বিজ্ঞাপন বাজেট এবং মার্কেটিং এর কৌশলের উপর। আপনার বাজেট যদি অনেক বেশি হয় তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই আপনি বেশি সেল করতে পারবেন এবং আপনার মার্কেটিং কৌশল যদি ভালো হয় তাহলে আপনি কম অর্থ খরচ করে বেশি সেল করতে পারবেন।
উদহারণস্বরূপ ধরে নেওয়া যাক, আপনি ড্রপশিপিং ব্যবসাতে নতুন এবং আপনার স্টোরটিও নতুন। আপনি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিদিন মাত্র ৩ টি সেল করে থাকেন এবং প্রতিটি সেল থেকে আপনি ৩ ডলার ইনকাম করে থাকেন তাহলে প্রতিদিন মোট ৯ ডলার আপনার ইনকাম হয়। প্রতিদিন আপনার ৯ ডলার ইনকাম হলে প্রতিমাসে আপনি ২৭০ ডলার ইনকাম করে থাকেন যেটি বাংলাদেশী মুদ্রায় বর্তমান রেট অনুযায়ী ৩০ হাজার টাকার কাছাকাছি হয়। সুতরাং আপনি নতুন হিসাবে শুরু করলে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করলে প্রতিমাসে আপনি ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।
ড্রপশিপিং এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা
পৃথিবীর সকল ব্যবসার মতো ড্রপশিপিং এর ও কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। নিচে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ড্রপশিপিং এর কিছু সুবিধা :-
• ড্রপশিপিং বিসনেস শুরু করতে খুব বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না।
• আপনাকে নিজে কোনো পণ্য উৎপাদন করতে হয় না।
• আপনাকে পণ্যের ডেলিভারি নিয়েও চিন্তা করতে হয় না।
• আপনি একটু দক্ষ হলে কোনো ঝামেলা ছাড়া ঘরে বসে একাই ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারবেন।
ড্রপশিপিং এর কিছু অসুবিধা :-
• পণ্যের মান খারাপ হলে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রচুর অভিযোগ আসে এবং সেটির প্রভাব যারা পণ্য উৎপাদন করেছে তাদের উপর না পড়ে আপনার স্টোরের উপর পড়ে।
• অর্থ সঞ্চয় করতে স্টোর একা ম্যানেজ করতে গেলে আপনাকে ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং ইত্যাদি অনেক কিছু সামলাতে হয় যার ফলে আপনার উপর কাজের চাপ বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার
উপসংহারে এটাই বলা যায় যে, ড্রপশিপিং এর মাধ্যমে অনলাইন থেকে ভালো পরিমান অর্থ উপার্জন করা যায়। আপনাকে পণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে ডেলিভারি কোনো বিষয়ে চিন্তা করতে হয় না। আপনি যদি ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট এবং মার্কেটিং এর স্কিল গুলো ভালোভাবে শিখে রাখেন তাহলে আপনি এখান থেকে ভালো পরিমান অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। আর এই বিষয়ে'যত আপনার অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকবে সেই অনুযায়ী আপনার আয়ও বাড়তে থাকবে।