বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের সেরা ৫ টি চাকরি কী কী?

একটি দেশের উন্নয়নে স্বাস্থ্যসেবা খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। জনগণ হলো একটি দেশের চালিকাশক্তি সুতরাং জনগণ সুস্থ থাকলে এবং কর্মমুখী হলে দেশের অর্থনীতি মুজবুত হয়। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে এবং সেই সাথে সৃষ্টি হচ্ছে হাজার হাজার কর্মসংস্থানের। স্বাস্থ্যসেবা খাতের কর্মচারীদের আয়ের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। নিম্নে স্বাস্থ্যসেবা খাতের সেরা ৫ টি চাকরি নিয়ে আলোচনা করা হল।



স্বাস্থ্যসেবা


বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের সেরা ৫ টি চাকরি


১. ডাক্তার


ডাক্তার হলো স্বাস্থ্যসেবা খাতের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। মানব কল্যাণে নিয়োজিত এই পেশাটি যেমন সম্মানজনক ঠিক তেমনই লাভজনক। মানুষ যতদিন থাকবে ঠিক তত দিন মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরণের সমস্যাও থাকবে আর এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের প্রয়োজন হবে। অর্থনৈতিক ভাবে দেখতে গেলেও একজন ডক্টরের আয় অন্যান্য চাকরির তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ডক্টরদের মাসিক গড় আয় সাধারণত ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। তবে আয়ের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে একজন ডাক্তার কেমন সেবা প্রদান করছে তার উপর। একজন ডাক্তার যদি ভালো সেবা প্রদান করে থাকে তাহলে তার কাছে বেশি রোগী আসবে এবং তার আয়ও অনেক বেশি হবে।


একজন ডাক্তার হতে গেলে আপনাকে কি কি ডিগ্রী বা দক্ষতা অর্জন করতে হবে?


বাংলাদেশে একজন ডাক্তার হতে গেলে নিম্নলিখিত ডিগ্রিগুলি অর্জন করতে হবে:

•  বেসিক মেডিসিন (বি.এম.বি.বি.এস): এটি বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠানিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠানিক ডিগ্রি।

•  প্রফেশনাল ডাক্তারেট (ডিএম): এটি চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ ও শিক্ষার জন্য একটি স্পেশালাইজড প্রফেশনাল ডিগ্রি।


উপরের ডিগ্রীগুলো ছাড়াও আপনাকে অনেক বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে যেমন:

•  রোগীর কি ধরণের সমস্যা সেটি আপনাকে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং বুঝতে হবে।

•  রোগীকে রোগমুক্ত করতে সঠিক পরামর্শ দান করতে হবে।

•  কোন রোগ কোন ওষুদের মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব সেই সম্পর্কে অধিক ধারণা রাখতে হবে।

•  আপনার কথা বলার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং কথা স্পষ্ট, সুন্দর ও গুছিয়ে বলতে হবে।


২. নার্স


নার্স হলো স্বাস্থ্যসেবা খাতের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। একজন নার্সের কাজ হলো রোগীদের দেখাশোনা করা ও মৌখিক পরামর্শ দেওয়া, ডক্টরের নির্দেশ অনুযায়ী রোগীদের ওষুধ দেওয়া ও ইনজেকশন দেওয়া, রোগীর বর্তমান অবস্থা কেমন সেটি পর্যবেক্ষণ করা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে নার্সরা নিযুক্ত থাকে। আপনি যদি নার্স হিসাবে ভালো সেবা দিতে পারেন তাহলে আপনার বেতনও বেশি হবে। বাংলাদেশে নার্সদের মাসিক গড় আয় সাধারণত ১৫ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। আপনার আয় সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং সেবার মানের উপর সুতরাং নার্স হিসাবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে এই বিষয়গুলোর উপর আপনাকে নজর দিতে হবে।


একজন নার্স হতে গেলে আপনাকে কি কি ডিগ্রী বা দক্ষতা অর্জন করতে হবে?


বাংলাদেশে একজন নার্স হতে গেলে নিম্নলিখিত ডিগ্রিগুলোর প্রয়োজন হবে:

•  বেসিক বিশেষজ্ঞ ডিপ্লোমা (নার্সিং সাইন্স): এটি বাংলাদেশের নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (বিএমডিসি) থেকে প্রদত্ত একটি চার বছরের ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম।

•  ব্যাচেলর অব স্যায়েন্স (বিএসসি) ইন নার্সিং: এটি একটি চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রোগ্রাম, যা বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়।

•  মাস্টার্স ইন নার্সিং (এমসি): বিশেষজ্ঞ নার্সিং চিকিৎসা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একটি দুই বছরের মাস্টার্স প্রোগ্রাম।


উপরের ডিগ্রীগুলো ছাড়াও আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে যেমন, একজন রোগীর সাথে সুন্দর ও স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা, বিভিন্ন উপায়ে একজন রোগীকে মোটিভেশন দেওয়া, সময়মতো রোগীকে ওষুধ দেওয়া এবং রোগীর বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়ে অবশ্যই আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে তাহলেই আপনার সেবা প্রদানের কোয়ালিটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।


৩. ফার্মাসিস্ট


ফার্মাসিস্ট হলো স্বাস্থ্যসেবা খাতের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। একজন ফার্মাসিস্ট এর প্রধান কাজগুলো হলো ওষুধ নির্মাণে সহয়তা করা এবং ওষুধের গুনাগত মান পরীক্ষা করা, ওষুধ বিক্রয় করা এবং রোগীদের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করা, হাসপাতালে গুনাগত মানের ওষুধ প্রদান করতে সহায়তা ছাড়াও ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে রোগী এবং ডাক্তার উভয়কেই সাহায্য করা। আপনি যদি একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ফার্মাসিস্ট হতে পারেন তাহলে আপনি মোটা অংকের টাকা আয় করতে পারবেন। বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টদের মাসিক গড় আয়ের পরিমাণ সাধারণত ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। আপনার এই পেশাতে অভিজ্ঞতা যদি বেশি হয় এবং আপনার দেওয়া ওষুধে যদি রোগীর সহজেই রোগ নিরাময় হয় তাহলে আপনার আয়ের পরিমাণ প্রচুর বেড়ে যাবে।


একজন ফার্মাসিস্ট হতে গেলে আপনাকে কি কি ডিগ্রী বা দক্ষতা অর্জন করতে হবে?


বাংলাদেশে একজন ফার্মাসিস্ট হতে গেলে নিম্নলিখিত ডিগ্রিগুলোর প্রয়োজন হতে পারে:

•  বেসিক বিশেষজ্ঞ ডিপ্লোমা (বিএফএম): বাংলাদেশের ফার্মেসি কাউন্সিল (বিএফপিসি) থেকে প্রদত্ত একটি চার বছরের ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম।

•  ব্যাচেলর অব ফার্মেসি (বিএফার্ম): এটি একটি চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রোগ্রাম, যা বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়।

•  মাস্টার্স ইন ফার্মেসি (এমপিহিল): ফার্মাসিস্টদের আধুনিক ফার্মেসি ও প্রযুক্তির বিষয়ে বিশেষজ্ঞতা অর্জনের জন্য একটি দুই বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি প্রোগ্রাম।


উপরের ডিগ্রীগুলো ছাড়াও আপনার বিশেষ কিছু দক্ষতার প্রয়োজন হবে যেমন ওষুধের গুনগত মান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা, রোগীকে ওষুদের ব্যাপারে সুন্দর ও স্পষ্ট ভাষায় বিস্তারিত বোঝাতে পারা, রোগীকে ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে আপনাকে দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে তাহলে আপনি ভবিষতে একজন সফল ফার্মাসিস্ট হতে পারবেন।


আরো পড়ুন :- বাংলাদেশের সেরা সরকারি চাকরি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের পোস্টটি পড়ুন।

পোস্ট :- বাংলাদেশের সেরা ৫ টি সরকারি চাকরি কী এবং কিভাবে আপনি চাকরিগুলো পেতে পারেন?


৪.  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হলো স্বাস্থ্যসেবা খাতের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রধান কাজ হলো স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে সহায়তা করা এবং এলাকার স্বাস্থ্য সেবা পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা করা, জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনা বৃদ্ধি করা, বিভিন্ন এলাকার স্বাস্থ্য জনিত সমস্যাগুলো শনাক্ত করা ইত্যাদি বিভিন্ন মানবিক কাজে অংশগ্রহণ করা। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বেতন তুলনামূল ভাবে বেশিই হয়ে থাকে। সুতরাং আপনি চাইলে একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হিসাবে উজ্জ্বল ভবিষৎ গড়তে পারেন।


একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হতে গেলে আপনাকে কি কি ডিগ্রী বা দক্ষতা অর্জন করতে হবে?


বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হতে গেলে নিম্নলিখিত ডিগ্রিগুলোর প্রয়োজন হতে পারে:

•  ব্যাচেলর অব সায়েন্স (বিএসসি) ইন পাবলিক হেলথ অথবা স্বাস্থ্য সায়েন্স: এটি একটি চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রোগ্রাম।

•  ব্যাচেলর অব সায়েন্স (বিএসসি) ইন নার্সিং: এটি একটি চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রোগ্রাম, যা স্থানীয় মেডিকেল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়।

•  মাস্টার্স ইন পাবলিক হেলথ বা স্বাস্থ্য ম্যানেজমেন্ট: এটি একটি দুই বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি প্রোগ্রাম, যা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদান করা হয়।

•  ব্যাচেলর অব লস্কা সার্টিফিকেট (বিএসসি): এটি একটি তিন বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রোগ্রাম, যা স্থানীয় মেডিকেল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়।


উপরে উল্লেখিত ডিগ্রীগুলো ছাড়াও আপনার বিভিন্ন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হবে যেমন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করা এবং সেখানকার মানুষদের স্বাস্থ্য জনিত সমস্যা সম্পর্কে তথ্য সংগ্র করা। একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হতে গেলে এইধরণের অভিজ্ঞতাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


৫. মেডিকেল ল্যাব টেকনোলজিস্ট


মেডিকেল ল্যাব টেকনোলজিস্ট হলো স্বাস্থ্যসেবা খাতের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। একজন মেডিকেল ল্যাব টেকনোলজিস্ট এর প্রধান কাজগুলো হলো রোগীর রক্ত, মল, মূত্র থেকে বিভিন্ন ধরণের নমুনা সংগ্রহ করা, পরীক্ষার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পরিচালনা করা, পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে রিপোর্ট তৈরী করা, পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করা এবং সেই অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা সহ ইত্যাদি কাজে তারা যুক্ত থাকে। বাংলাদেশে একজন মেডিকেল ল্যাব টেকনোলজিস্ট এর বেতন সাধারণত ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭০০০০ হাজার টাকা পযন্ত হতে পারে। টাকার পরিমাণ নির্ভর করে আপনার অভিজ্ঞতার উপর।


একজন মেডিকেল ল্যাব টেকনোলজিস্ট হতে গেলে আপনাকে কি কি ডিগ্রী বা দক্ষতা অর্জন করতে হবে?


বাংলাদেশে মেডিকেল ল্যাব টেকনোলজিস্ট হতে গেলে নিম্নলিখিত ডিগ্রিগুলোর প্রয়োজন হতে পারে:

•  ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ল্যাব টেকনোলজি (ডিএমএলটি): এটি একটি তিন বছরের ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম, যা পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউট (এইচএসআই) ও প্রাইভেট হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (পিএইচটি) এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিতে অনুষ্ঠিত হয়।

•  ব্যাচেলর অব সায়েন্স (বিএসসি) ইন মেডিকেল ল্যাব টেকনোলজি: এটি একটি চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রোগ্রাম, যা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

•  মাস্টার্স ইন মেডিকেল ল্যাব টেকনোলজি (এমএমএলটি): এটি একটি দুই বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি প্রোগ্রাম, যা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।


উপসংহার


বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ চাকরি সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এই চাকরিগুলো পেতে হলে কি কি দক্ষতা থাকা দরকার এবং কি কি ডিগ্রী প্রয়োজন সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত বলা হয়েছে। আপনি চাইলে এই বিষয়গুলোর একটি নিয়ে পড়ালেখা করতে পারেন এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষৎ গড়তে পারেন।

Tags

Post a Comment

0 Comments