বাংলাদেশের আইটি খাতে সেরা ৫ টি চাকরি কী কী?

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আইটি খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে সরকার প্রতিবছর এই খাতে বিপুল পরিমানে অর্থ বিনিয়োগ করছে। বর্তমানে দেশজুড়ে সকল ব্যবসা - বাণিজ্য ধীরে ধীরে অনলাইন হচ্ছে এর ফলে আইটি খাতে বিভিন্ন চাকরির চাহিদাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। অন্যান্য চাকরির তুলনায় আইটি খাতের বিভিন্ন চাকরিতে বেতন বেশি হয়ে থাকে ফলে তরুণ প্রজন্ম এই সকল চাকরির দিকে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। আজকের এই পোস্টে আইটি খাতের সেরা ৫ টি চাকরি এবং বেতন ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।



বাংলাদেশের আইটি খাত


১. সফটওয়্যার ডেভেলপার


প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে ওয়েব অথবা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন যারা ডেভেলপ করে থাকে তাদেরকে সফটওয়্যার ডেভেলপার বলা হয়। নিজস্ব বা ব্যবসায়িক কাজের জন্য কোনো ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বানাতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই একজন সফটওয়্যার ডেভেলপারের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে ইন্টারনেটে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন যুক্ত হচ্ছে যেই কারণে সফটওয়্যার ডেভেলপারের চাহিদাও প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র নতুন ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করার জন্যই নয় বরং পুরানো মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা ওয়েবসাইটের দেখাশোনা করার জন্য এবং কোনো মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা ওয়েবসাইটে সমস্যা দেখা দিলে সেটি ঠিক করার জন্যও একজন সফটওয়্যার ডেভেলপারের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশে একজন সফটওয়্যার ডেভেলপারের বেতন ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে তবে বেতন আপনার অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। আপনি যদি অনেক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানেন এবং এই বিষয়ে আপনার কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা যদি থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বেতন বেশি হবে।


একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসাবে চাকরি পাওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন?


•  বহু কোম্পানিতে সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসাবে চাকরির জন্য আপনার একটি কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রীর প্রয়োজন হতে পারে।

•  আপনাকে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান থাকতে হবে।

•  আপনাকে সুন্দরভাবে ওয়েব বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন করতে জানতে হবে।

•  আপনাকে ডাটাবেস সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান রাখতে হবে।

•  বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সম্পর্কে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে।


২. ডাটা সায়েন্টিস্ট


বর্তমান যুগে ডাটার গুরুত্ব অপরিসীম। একজন ডাটা সায়েন্টিস্ট সাধারণত ডাটা মডেলিং, ডাটা মাইনিং, মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং, ন্যূরাল নেটওয়ার্ক, ডাটা ভিজুয়ালাইজেশন, এবং ডাটা পাইপলাইন তৈরির জন্য প্রযুক্তি এবং টুলসের সাথে কাজ করে। বর্তমানে ব্যাংকিং, অর্থনীতি, বিজ্ঞাপন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কেট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য ডাটা সায়েন্টিস্টদের নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ডাটা সায়েন্টিস্টদের বেতনও তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়ে থাকে তবে পেশা, দক্ষতা, প্রতিষ্ঠানটি কেমন এই সকল বিভিন্ন বিষয়ের উপর বেতন নির্ভর করে। বাংলাদেশে একজন ডাটা সায়েন্টিস্ট সাধারণত ৩০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকার মধ্যে আয় করে থাকে সুতরাং আপনি চাইলে একজন ডাটা সায়েন্টিস্ট হিসাবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।


একজন ডাটা সায়েন্টিস্ট হিসাবে চাকরি পাওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন?


•  ডাটা সায়েন্টিস্ট হতে গেলে আপনাকে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে যেমন Java, Python, SQL ইত্যাদি।

•  আপনাকে ডাটা এনালাইসিস ও ডাটা মডেলিং সম্পর্কে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

•  কিভাবে ডাটাবেস ডিজাইন, ডাটাবেস স্ট্রাকচার, ডাটা স্টোরেজ, ইনডেক্সিং ইত্যাদি করা যায় এই সম্পর্কে আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

•  ডাটা ভিজুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে ডাটাগুলোকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে জানতে হবে।

•  অনেক কোম্পানি আছে সেখানে চাকরির জন্য আপনার কম্পিউটার সায়েন্স অথবা ডাটা সায়েন্স এর উপর ডিগ্রীর প্রয়োজন হবে।


৩. সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট


আপনার ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন অথবা ডাটাকে হ্যাকারদের থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টদের গুরুত্ব অপরিসীম। হ্যাকাররা বড় বড় ওয়েবসাইটে সাইবার হামলা করে ব্যবহারকারীদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয় এর ফলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সকল সাইবার হামলা থেকে রক্ষা পেতে এবং ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনে নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য অবশ্যই একজন সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টের প্রয়োজন হবে। একজন সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট এর বেতন কেমন হবে সেটি কাজের ধরণ, অভিজ্ঞতা সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে একজন সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট সাধারণত ৩০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করে থাকে। এই বিষয়ে আপনার আগ্রহ থাকলে আপনি সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে পড়ালেখা করতে পারেন।


একজন সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট হতে গেলে কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন?


•  আপনাকে অবশ্যই কম্পিউটার সায়েন্স, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

•  জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো শিখতে হবে।

•  সাইবার সিকিউরিটির সঙ্গে যুক্ত টেকনোলজিগুলো সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখতে হবে যেমন সাইবার অ্যাট্যাক, ক্র্যাকিং, ম্যালওয়্যার, সাইবার ডিফেন্স টেকনোলজি, ক্রিপ্টোগ্রাফি, নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ইত্যাদি।

•  আপনাকে অবশ্যই ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সাইবার সিকিউরিটির উপর সার্টফিকেট অর্জন করতে হবে যেমন Certified Ethical Hacker, Certified Information Systems Security Professional ইত্যাদি।

•  আপনাকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সুরক্ষা প্রদান করে অথবা সিনিয়রদের সাথে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।


আরো পড়ুন :- বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট সেক্টরের চাকরিগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের পোস্টটি পড়ুন।

পোস্ট :- বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট সেক্টরে সেরা পাঁচটি চাকরি


৪. গ্রাফিক্স ডিজাইনার


সুন্দরভাবে কোনো কিছুকে ডিজাইন করার জন্য একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদহারণস্বরূপ বলা যায়, অনলাইনে আপনার কোনো প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন করতে হলে অবশ্যই একটি আকর্ষণীয় ছবির প্রয়োজন হবে যেটিতে প্রোডাক্টকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হবে এবং এটি বানানোর জন্য আপনার একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের প্রয়োজন হবে। অনলাইন মার্কেটিং ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের ডিজাইন করার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে গ্রাফিক্স ডিজাইনারের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার সাধারণত ২৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকে।


একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসাবে চাকরি পেতে গেলে কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন?


•  গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসাবে অনেক কোম্পানিতে চাকরি পেতে হলে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে একটি সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হতে পারে এবং কিছু আদর্শ সার্টিফিকেট যেমন Adobe Certified Expert (ACE), Autodesk Certified Professional (ACP) এর প্রয়োজন হতে পারে।

•  একজন প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে গেলে আপনাকে অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ হওয়া প্রয়োজন এবং বিভিন্ন ধরণের আকর্ষণীয় ডিজাইন করতে হলে আপনার মাথায় ক্রিয়েটিভ আইডিয়া থাকা প্রয়োজন।

•  গ্রাফিক্স ডিজাইন করার সময় ডিজাইন প্রিন্সিপল, টাইপোগ্রাফি, রঙের সিস্টেম, ছবি বিশেষত্ব, লেআউট ডিজাইন, গ্রাফিক্স স্ট্যান্ডার্ড ইত্যাদি সম্পর্কে টেক্নিক্যাল জ্ঞান প্রয়োজন।

•  যেই সফটওয়্যারগুলোর মাধ্যমে ডিজাইন করবেন সেগুলোতে দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন যেমন Photoshop, Illustrator, Adobe XD ইত্যাদি।

•  প্রতিনিয়ত আপনাকে চর্চা করতে হবে তাহলে আপনার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার ডিজাইন ও ধীরে ধীরে সুন্দর হবে।


৫.  কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার


কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়াররা সাধারণত নেটওয়ার্ক সিস্টেম পরিচালনা, নেটওয়ার্ক সিস্টেম ডিজাইন সহ বিভিন্ন কাজ করে থাকে। তারা নেটওয়ার্ক সুরক্ষা, কাঠামো, ডাটা সেন্টার ব্যবস্থাপনা, ব্যাকআপ এবং পুনরুদ্ধার, কাজের ভারসাম্যতা এবং স্কেলিং, ইন্টারনেট প্রোটোকল সম্পর্কে দক্ষতা সম্পন্ন। বাংলাদেশে এই চাকরির চাহিদা প্রতিনিয়িত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়াররা সাধারণত ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকে। আপনি চাইলে একজন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে সুন্দর একটি ভবিষৎ গড়তে পারেন।


একজন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হতে গেলে কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন?


•  শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসাবে আপনাকে অবশ্যই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর ডিগ্রী অর্জন করতে হবে।

•  নেটওয়ার্কিং ওয়ার্ল্ডের প্রধান প্রয়ুক্তি, প্রোটোকল, প্রস্তুতি এবং পরিচালনার সম্পর্কে ভালো জ্ঞান প্রয়োজন।

•  নেটওয়ার্কিংয়ে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি সফটওয়্যার সম্পর্কে আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।


উপসংহার


বাংলাদেশের আইটি সেক্টর হলো বিশাল একটি সেক্টর। এখানে বিভিন্ন ধরণের চাকরি পাওয়া যায় তবে উপরের চাকরিগুলো চাহিদা এবং বেতন অনুযায়ী সেরা ৫ টি চাকরি হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। আপনি চাইলে কোনো একটি চাকরির মাধ্যমে আপনার ভবিষৎ গড়ে তুলতে পারেন।

Tags

Post a Comment

0 Comments