ইন্টারনেট ভিত্তিক মার্কেটিংকে মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে কম খরচে একটি ব্যবসাকে দেশ অথবা দেশের বাইরে প্রচার করতে হলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিকল্প নেই। ব্যবসাকে প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ওয়েবসাইট মার্কেটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, অনলাইন বিজ্ঞাপন বা অনলাইন ভিত্তিক যে সকল প্রকার মার্কেটিং করা হয় থাকে তাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব
একটি ক্ষুদ্র বা মাঝারি ব্যবসাকে বড় করে তোলার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। যদি আপনার একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা থাকে তাহলে সেটিকে বড় করতে হলে মার্কেটিংয়ের প্রয়োজন কিন্তু টিভিতে বা পোস্টার লাগিয়ে মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে যেমন :-
• টিভিতে বিজ্ঞাপনের খরচ অনেক হয়ে থাকে যেটির ভার আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসা বহন করতে পারবে না এবং টিভিতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কাস্টমারের কাছে পৌঁছানো যায় না কারণ আপনার বিজ্ঞাপনটি যদি একটি নির্দিষ্ট লিঙ্গ অথবা বয়সের জন্য হয়ে থাকে তখন টিভিতে আপনার বিজ্ঞাপনটি কোন লিঙ্গ বা কোন বয়সের মানুষ দেখছে সেটি আপনি বুঝতে পারবেন না অথচ আপনাকে ঠিকই বিজ্ঞাপনটির জন্য অর্থ ব্যয় করতে হবে।
• আপনি যদি পোস্টারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন করে থাকেন তাহলে সেটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। সমগ্র দেশ অথবা বিশাল এলাকার জন্য যদি পোস্টার ছাপাতে চান তাহলে আপনাকে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হবে এবং আপনি যাদের টার্গেট করে বিজ্ঞাপনটি বানিয়েছেন তারা আপনার পোস্টারটি দেখছে কিনা সেই সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা থাকবে না।
• টিভি অথবা পোস্টারের মাধ্যমে দেশের মধ্যে বিজ্ঞাপন করা সহজ হলেও আপনি যদি আপনার ব্যবসা বিদেশে প্রচার করতে চান তাহলে সেটি আপনার জন্য অনেক জটিল হয়ে দাঁড়াবে।
উপরের সমস্যাগুলো ছাড়াও আপনাকে আরও বহু ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। টিভি বা রেডিওতে বিজ্ঞাপন করা এগুলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে পড়ে না এবং এগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্সদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারবেন না। তবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে উপরের সমস্যাগুলোর সমাধান সহজেই করা যায় তাই বলা যায় যে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসার জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বর্তমান যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়া একটি ব্যবসাকে বড় করে তোলা অনেক মুশকিলের ব্যাপার।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা কি কি?
একটি কোম্পানিকে বিজ্ঞাপন করার ক্ষেত্রে বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কোম্পানির বিজ্ঞাপনগুলো যদি সঠিক কাস্টমারদের কাছে পৌঁছাতে না পারে তাহলে অর্থের অপচয় হয়ে থাকে। এই ধরণের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গুগল, ফেইসবুক সহ বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপন দিলে আপনি অনেক ধরণের সুযোগ সুবিধা পাবেন যেমন :-
• বয়সভিত্তিক বিজ্ঞাপন: আপনি চাইলে নির্দিষ্ট বয়সের মানুষদের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন যেমন আপনার বিজ্ঞাপনটি ছোটদের জন্য সুতরাং আপনি ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সের মানুষদের টার্গেট করে বিজ্ঞাপন চালাতে পারবেন।
• লিঙ্গভিত্তিক বিজ্ঞাপন: আপনি চাইলে নির্দিষ্ট লিঙ্গের মানুষদেরকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন যেমন আপনার বিজ্ঞাপন যদি মেয়েদের জন্য হয় তাহলে আপনি শুধুমাত্র মেয়েদেরকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন আবার আপনার বিজ্ঞাপন যদি ছেলেদের জন্য হয় তাহলে আপনি শুধুমাত্র ছেলেদেরকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন।
• লোকেশনভিত্তিক বিজ্ঞাপন: আপনি চাইলে একটি নির্দিষ্ট লোকেশনকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন যেমন আপনার যদি টার্গেট থাকে বাংলাদেশের ঢাকা শহরের মানুষদের কাছে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য তাহলে আপনি শুধুমাত্র ঢাকাকেই টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন।
• আকর্ষণভিত্তিক বিজ্ঞাপন: আপনি চাইলে আকর্ষণের ভিত্তিতে বিভিন্ন মানুষকে বিজ্ঞাপন দেখতে পারবেন যেমন আপনার বিজ্ঞাপনটি যদি গেমিং সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন হয় তাহলে আপনি চাইলে যারা গেমিং এর প্রতি আকর্ষিত তাদেরকে আপনার বিজ্ঞাপনটি দেখতে পারবেন।
• বিদেশভিত্তিক বিজ্ঞাপন: আপনি চাইলে ঘরে বসেই বিভিন্ন দেশে আপনার বিজ্ঞাপনটি প্রচার করতে পারবেন যেমন আপনি বাংলাদেশের একজন নাগরিক কিন্তু আপনি চান আপনার বিজ্ঞাপনটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রচার করতে, আপনি এই কাজটি ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই করতে পারবেন।
এইভাবে বিভিন্ন উপাইয়ে আপনার বিজ্ঞাপনটি টার্গেটেড কাস্টমারদেরকে দেখাতে পারবেন এবং এর ফলে আপনার অনেক অর্থ সঞ্চয় হবে। টিভিতে বিজ্ঞাপন দিতে গেলে আপনি নির্দিষ্ট বয়স, নির্দিষ্ট লিঙ্গ, নির্দিষ্ট লোকেশন ইত্যাদি বহু কিছুকে টার্গেট করতে পারবেন না এর ফলে আপনার বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব কমে যাবে এবং যারা আপনার টার্গেটেড কাস্টমার না তাদেরকেও বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আপনার বহু অর্থ খরচ হবে এবং যার প্রভাব আপনার ব্যবসাতেও পড়বে। সুতরাং একটি ব্যবসাতে কম খরচে ভালো ফলাফল পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাহায্য নিতে হবে।
আরো পড়ুন :- বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কীভাবে অর্থ উপার্জন করবেন এই বিষয়ে জানতে নিচের পোস্টটি পড়ুন।
পোস্ট :- অনলাইন থেকে ইনকামের জন্য সেরা পাঁচটি বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে কিভাবে আয় করবেন?
বর্তমানে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সকল প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মার্কেটিং এর দিকে ঝুঁকছে কারণ অফলাইনের তুলনায় অনলাইনে ব্যবসাকে প্রচার করা অনেক সহজ এবং সাশ্রয়ী। এই জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর এক্সপার্টের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি একজন ডিজিটাল মার্কেটর হিসাবে কোনো কোম্পানিতে অথবা একজন ফ্রীলান্সার হিসাবে কাজ করতে পারেন। ডিজিটাল মার্কেটরদের বেতন সাধারণত বেশিই হয়ে থাকে। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে একজন ডিজিটাল মার্কেটরের এভারেজ স্যালারি ৫০০০০ ডলার থেকে ১০০০০০ ডলারের মধ্যে হয়ে থাকে। আপনি যে দেশে বসবাস করেন'সেই দেশের জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী আপনি স্যালারি পেয়ে থাকবেন। তবে আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করে থাকেন তাহলে আপনার আয়ের পরিমাণ আপনার কাজের উপর নির্ভর করবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং করতে হলে কি ধরণের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে?
ডিজিটাল মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে বিজ্ঞাপন সেটআপ এবং মার্কেট সমন্ধে ধারণা অর্জন করতে হবে। কোনো প্রোডাক্ট বিক্রয় করতে চাইলে প্রথমে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রিসার্চ করতে হবে যেমন :-
• প্রোডাক্টটি কোন বয়সী মানুষের কাছে বেশি জনপ্রিয়।
• প্রোডাক্টটি কোনো বিশেষ লিঙ্গের মানুষের জন্য বানানো হয়েছে নাকি সবার জন্য।
• প্রোডাক্টটির প্রতি কোন ধরণের মানুষ বেশি আকর্ষিত হতে পারে।
• প্রোডাক্টটি কোন লোকেশনে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
• প্রোডাক্টটি অন্যরা কেমন দামে বিক্রয় করছে।
এই সকল বিষয়ে আপনাকে প্রথমে রিসার্চ করে নিতে হবে এবং পরবর্তীতে প্রোডাক্ট এর আকর্ষণীয় ছবি এবং ভিডিও ব্যবহার করে আপনার রিসার্চ এর তথ্য অনুযায়ী সুন্দরভাবে বিজ্ঞাপনটি সেটআপ করতে হবে। মার্কেট রিসার্চ এবং বিজ্ঞাপন সেটআপ এই দুইটি বিষয়ের উপর অধিক জ্ঞান অর্জন করতে পারলে আপনি একটি ব্যবসাকে লাভজনক করে তুলতে পারবেন সুতরাং এই দুইটি বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করাই আপনার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
উপসংহার
বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশা। আপনি একজন ডিজিটাল মার্কেটর হিসাবে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন তবে দক্ষতা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করবেন আপনাকে অবশ্যই সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্পর্কে রিসার্চ করতে হবে যে তারা কিভাবে মার্কেটিং করছে। আপনার কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কোন রিলেটেড সেই মার্কেট সম্পর্কে অবশ্যই আপনাকে রিসার্চ করতে হবে। আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়াতে নিয়মিত বিজ্ঞাপন টেস্টিং করতে হবে এবং বোঝার চেষ্টা করতে হবে যে মানুষ কেমন ধরণের বিজ্ঞাপন পছন্দ করছে। রিসার্চ এবং আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন সেটআপ এর মাধ্যমে আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পেলেই ধীরে ধীরে আপনি অন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবেন।