ইমেইল মার্কেটিং কী? ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কিভাবে আয় করা যায়?

ইমেইল শব্দের অর্থ হলো ইলেকট্রনিক মেইল। কোনো কোম্পানি যখন তাদের পণ্য বা সেবা প্রচারের উদ্দেশ্যে গ্রাহকদের কাছে মেইল প্রেরণ করে তাকে ইমেইল মার্কেটিং বলা হয়। ইমেইল মার্কেটিং হলো ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একটি অংশ। কোনো কোম্পানির পণ্য বিক্রয় বা সেবা ‌প্রদানের জন্য ইমেইল মার্কেটিং একটি সহজ এবং লাভজনক উপায়।



ইমেইল মার্কেটিং


ইমেইল মার্কেটিং এর গুরুত্ব?


ইমেইল মার্কেটিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী ইমেইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪.৫ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। এই বিপুল ব্যবহারকারীর সংখ্যা দেখেই বোঝা যায় যে ইমেইলের জনপ্রিয়তা মানুষের মধ্যে দিন দিন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানযুগে প্রায় সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাই নিজের দৈনন্দিক কাজের জন্য অন্ততপক্ষে একটি ইমেইল এড্রেস ব্যবহার করে থাকে। ইমেইলের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে জিমেইল অথবা গুগল মেইল। সোশ্যাল মিডিয়াতে একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে বর্তমানে বেশিরভাগ সফটওয়্যারে বিভিন্ন কাজে একটি ইমেইল এড্রেসের প্রয়োজন হয় সুতরাং মোবাইল,কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইস ব্যবহার করার জন্য একটি ইমেইল এড্রেস থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


উপরের তথ্য থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে আমাদের দৈনন্দিক জীবনে ইমেইলের গুরুত্ব কতটুকু। সুতরাং এই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটিকে কাজে লাগিয়ে আমরা মার্কেটিং শুরু করতে পারি। আপনার যদি কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে তাহলে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানকে ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন। আবার আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে কাজ করে থাকেন তাহলে আপনি আপনার ক্লাইন্টের ব্যবসাকে ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রচার করতে পারেন। যেহেতু প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ ইমেইল ব্যবহার করে থাকে সেহেতু অনলাইন মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ইমেইল মার্কেটিং এর গুরুত্ব অপরিসীম।


ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে কিভাবে আয় করা যায়?


ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ধরণের পণ্য বা সেবা বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি একটি পণ্য বিক্রয় করবেন যেটিতে আপনার মোট লাভ হবে ৫ ডলার। আপনার বিজ্ঞাপনের ইমেইলটি মোট ১ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছাতে খরচ হবে ৫ ডলার। সুতরাং যদি ১ হাজার মানুষের কাছে আপনি আপনার পণ্য বিক্রয়ের ইমেইলটি পাঠালে এবং তার মধ্যে মাত্র ২ জন যদি আপনার পণ্যটি ক্রয় করে থাকে তাহলে আপনার মোট লাভ হলো ১০ ডলার। তাহলে আপনার পণ্য বিক্রয়ের ১০ ডলার থেকে যদি ইমেইল মার্কেটিং এর খরচ ৫ ডলার বাদ দেওয়া হয় তাহলে আপনার মোট লাভের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৫ ডলার।


উপরের হিসাব থেকে বোঝা যায় যে, মাত্র ৫ ডলার ইনভেস্ট করে আপনি দ্বিগুন অর্থাৎ ১০ ডলার ইনকাম করতে পারছেন। তাহলে এই হিসাব অনুযায়ী ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি যদি ৫০ ডলার খরচ করেন তাহলে আপনি মোট ১০০ ডলার ইনকাম করতে পারবেন। আপনার মার্কেটিংয়ের বাজেট যত বেশি হবে সেই অনুযায়ী পণ্য বা সেবা বিক্রয় করে আপনি তত বেশি পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। তবে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আপনি কি পরিমাণ পণ্য বা সেবা বিক্রয় করতে পারবেন সেটি বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন - পণ্যের দাম, ইমেইলের টেমপ্লেট ডিজাইন, আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স ইত্যাদি। আপনি কোন কোম্পানির মাধ্যমে ইমেইল মার্কেটিং করছেন এবং সেটির খরচ কেমন এই বিষয়টিও আপনার মুনাফার উপর প্রভাব ফেলবে। অবশেষে বলা যায়, আপনি যদি আপনার পণ্য বা সেবার দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রেখে সঠিক অডিয়েন্সদের টার্গেট করে সুন্দর ভাবে ইমেইল মার্কেটিং করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনি ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারবেন।


ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য সেরা কিছু প্লাটফর্ম


ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার ব্যবসাকে প্রচার করতে হলে অবশ্যই একটি প্লাটফর্ম দরকার যেখান থেকে আপনি আপনার কাস্টমারদেরকে ইমেইল পাঠাতে পারবেন। মেইলের টেমপ্লেট ডিজাইন সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ আপনি প্লাটফর্মের মাধ্যমে করতে পারবেন। ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু প্লাটফর্মের নাম নিচে দেওয়া হলো :-


•  Mailchimp

•  Constant Contact

•  GetResponse

•  HubSpot

•  MailerLite


উপরের উল্লেখিত প্লাটফর্মগুলো ইইমেইল মার্কেটিং এর জন্য অত্যান্ত জনপ্রিয়। আপনি চাইলে এইগুলোর মধ্যে একটি ব্যবহার করতে পারেন তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যে বিভিন্ন প্লাটফর্মগুলোর প্যাকেজের দাম বিভিন্ন রকম। আপনার বাজেট অনুযায়ী যে প্লাটফর্মটি আপনার কাছে সঠিক মনে হয় সেটি আপনি ব্যবহার করতে পারেন।


আরো পড়ুন :- ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে আয়ের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের পোস্টটি পড়তে পারেন।

পোস্ট :- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে কিভাবে অনলাইন থেকে আয় করা যায়?


কিভাবে ইমেইল মার্কেটিং শুরু করবেন?


ইমেইল মার্কেটিং শুরু করার জন্য প্রথমে আপনি আপনার পছন্দ মতো একটি মার্কেটিং প্লাটফর্ম বেছে নিন। তারপর প্লাটফর্ম থেকে আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট অনুযায়ী একটি প্যাকেজ বেছে নিন। তারপর আপনি আপনার ইমেইল ক্যাম্পেইন সেটআপ করুন এবং আপনি যেই ইমেইল এড্রেসগুলোতে মার্কেটিং করতে চান সেই ইমেইল এড্রেসগুলো প্লাটফর্মে আপলোড করুন। তারপর আপনি আপনার মেইলের টেমপ্লেট সেটআপ করুন। আপনি অবশ্যই মনে রাখবেন যে মেইলের টেমপ্লেট সেটআপ করা এবং মেইলকে একটি সুন্দর রূপ দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কারণ আপনার মেইলের সুন্দর্য বজায় থাকলে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সঠিক উপায়ে সাজালে আপনার মেইলটির প্রতি ইমেইল ইউসার আকর্ষিত হবে এবং এতে করে আপনার পণ্য বা সেবাটি বিক্রয়ের সম্ভবনা বেড়ে যাবে সুতরাং ইমেইলের টেমপ্লেট ডিজাইন আপনাকে খুব মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। অবশেষে সকল কাজ সম্পূর্ণ হলে আপনাকে ইমেইল ক্যাম্পেইনটি শুরু করতে হবে তারপর আপনার প্লাটফর্মটি আপনার দেওয়া সকল ইমেইল এড্রেসে বিজ্ঞাপনের মেইলটি পাঠিয়ে দেবে। তারপর আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে ভালো একটি ফলাফলের জন্য। আপনাকে মেইলগুলো পাঠাতে যত ডলার খরচ করতে হয়েছে তার থেকে যদি বেশি ইনকাম করতে পারেন তাহলে বুঝবেন যে ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি সফল হয়েছেন।


একটি অনলাইন ব্যবসার জন্য ইমেইল মার্কেটিং কেন গুরুত্বপূর্ণ?


ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিক্রয় করা ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা যায় যেমন, একটি অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তার কাস্টমারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয় কারণ এর বিভিন্ন সুফল আছে যেমন :-


•  ওয়েবসাইটে কোনো বড় ধরণের পরিবর্তন আসলে সেটি সম্পর্কে ইমেইলের মাধ্যমে কাস্টমারকে জানানো

•  ওয়েবসাইট কোনো কারণে বন্ধ থাকলে বা অন্য কোনো সমস্যা হলে সেটি সম্পর্কে ইমেইলের মাধ্যমে কাস্টমারকে জানানো।

•  কোনো বিশেষ দিন উপলক্ষে আপনার ওয়েবসাইটে বিশেষ কোনো অফার চললে সেটি সম্পর্কে ইমেইলের মাধ্যমে কাস্টমারকে জানানো।

•  কোনো কাস্টমার অনেকদিন ধরে আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট না করলে আপনি ইমেইলের মাধ্যমে তাকে বিভিন্ন উপায়ে আমন্ত্রণ করতে পারেন।


উপরে উল্লেখিত কারণগুলো ছাড়াও আরও বহু কারণ আছে ইমেইল মার্কেটিং করার। আপনার ওয়েবসাইটের আপডেটগুলো সম্পর্কে কাস্টমারকে জানাতে ইমেইল মার্কেটিং এর বিকল্প নেই। অবশেষে বলা যায় অনলাইনে একটি ব্যবসা সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য ইমেইল মার্কেটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ।


ইমেইল মার্কেটিং এর কিছু অসুবিধা


ইমেইল মার্কেটিং এর যেমন প্রচুর সুবিধা রয়েছে তেমন কিছু অসুবিধাও রয়েছে যেমন কাস্টমারকে অতিরিক্ত মেইল পাঠানোর ফলে সে বিরক্তিবোধ করতে পারে এবং আপনার মেইল সার্ভিসটিকে 'Unsubscribe' করে দিতে পারে অথবা আপনার ওয়েবসাইট থেকে পরবর্তীতে আর কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় না করতে পারে। সুতরাং আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে আপনি যেন আপনার কাস্টমারকে অত্যাধিক পরিমাণে মেইল না পাঠান। আপনার ওয়েবসাইটে খুব গুরুত্বপূর্ণ আপডেট থাকলে বা বড় কোন ধরণের অফার চললে তখন আপনি আপনার কাস্টমারকে সেই বিষয়ে বিস্তারিত মেইল পাঠাতে পারেন কিন্তু আপনি যদি প্রতিনিয়ত কাস্টমারকে মেইল করে বিরক্ত করতে থাকেন তাহলে সেটি আপনার ব্যবসার জন্য ভবিষতে মঙ্গলকর হবে না।


উপসংহার


উপসংহারে বলা যায় যে, বর্তমান যুগে অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য ইমেইল মার্কেটিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। ওয়েবসাইটে একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রোডাক্ট এর বিজ্ঞাপন এবং কাস্টমারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার জন্য ইমেইল মার্কেটিং এর বিকল্প নেই। সুতরাং আপনার একটি অনলাইন ব্যবসা থাকলে আপনি ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ব্যবসাটিকে আরো বিস্তার করতে পারবেন এবং প্রচুর পরিমানে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

Post a Comment

0 Comments