বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের সেরা ৫ টি চাকরি কী কী?

শিক্ষা খাতের উপর মূলত একটি দেশের ভবিষৎ নির্ভর করে। একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি অনুন্নত হয় তাহলে ভবিষতে দেশের উন্নতি হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম এবং একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি উন্নত হয় তাহলে ভবিষতে সেই দেশ উন্নতি লাভ করবে। এই কারণে শিক্ষা খাতে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে থাকে এবং সৃষ্টি হয় হাজার হাজার নতুন চাকরির। আজকের এই পোস্টে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের সেরা ৫ টি চাকরি নিয়ে আলোচনা করা হবে।



বাংলাদেশের শিক্ষা



১. শিক্ষক

শিক্ষক একটি খুবই সম্মানজনক এবং মহান পেশা। ছাত্র - ছাত্রীদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়া হলো একজন শিক্ষকের প্রধান কাজ। শিক্ষক বিভিন্ন প্রকার হতে পারে যেমন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইত্যাদি। আবার একজন শিক্ষক বিভিন্ন বিষয়ের উপর শিক্ষা দান করতে পারেন যেমন গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান ইত্যাদি। আপনার যদি মনে হয় আপনার মধ্যে শিক্ষা দানের দক্ষতা আছে এবং অন্যকে সুন্দরভাবে বোঝানোর ক্ষমতা আছে তাহলে আপনি একজন শিক্ষক হিসাবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করার কথা ভাবতে পারেন।


একজন শিক্ষক হতে গেলে কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন?


•  আপনি যে বিষয়ের উপর শিক্ষকতা করতে চান সেই বিষয়তে আপনাকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করতে হবে।

•  আপনার মধ্যে অবশ্যই ছাত্র - ছাত্রীদের সুন্দরভাবে বোঝানোর দক্ষতা থাকতে হবে।

•  শিক্ষকতা একটি সম্মানজনক পেশা সুতরাং আপনার আচরণ সবসময় নম্র ভদ্র হতে হবে।

•  দেশের শিক্ষানীতি ও নিয়ম কানুন সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।


২. শিক্ষা পরিদর্শক

শিক্ষা পরিদর্শকদের প্রধান কাজ হলো দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ম - কানুন মেনে কাজ করছে কিনা এগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখা। এছাড়াও শিক্ষানীতির উন্নয়ন, প্রশাসনিক সহায়তা, শিক্ষাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা ছাড়াও বিভিন্ন কাজ তারা করে থাকেন। বাংলাদেশে প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোতে সঠিক উপায়ে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে কিনা বা কোনো ধরণের সমস্যা আছে কিনা এগুলো ঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র - ছাত্রীরা বিভিন্ন সমস্যার সমুখীন হবে এর ফলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শিক্ষা পরিদর্শক নিয়োগ করা হয়ে থাকে। আপনি যদি দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশসেবায় যোগ দিতে চান তাহলে আপনিও শিক্ষা পরিদর্শক হওয়ার লক্ষে কাজ করতে পারেন।


একজন শিক্ষা পরিদর্শক হওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন?


•  একজন শিক্ষা পরিদর্শক হওয়ার জন্য এইচএসসি পাশ অথবা একটি ডিগ্রির প্রয়োজন হতে পারে।

•  একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান কেমন সেটি কিভাবে যাচাই করতে হয় সেই সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

•  একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিভাবে বিভিন্ন সমস্যা খুঁজে বের করতে হয় এবং তার সমাধানগুলো কিভাবে করা যায় এই ধরণের দক্ষতাগুলো অর্জন করতে হবে।

•  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র - ছাত্রী, বিভিন্ন কর্মচারীদের সাথে কিভাবে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কথা বলতে হবে এই বিষয়ে ধারণা থাকা প্রয়োজন।


৩. প্রশাসনিক কর্মকর্তা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মূলত শিক্ষার মান উন্নয়ন সহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকে যেমন শিক্ষানীতি তৈরী করা, শিক্ষার্থী ম্যানেজমেন্ট, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নতির পরিকল্পনা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, বাজেট পরিচালনা, প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ ইত্যাদি। একটি দেশের তরুণ - তরুণীদের উন্নতমানের শিক্ষা প্রদান করতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হয় আর এই পরিবর্তনগুলো সাধারণত প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ করে থাকেন। আপনি যদি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ কোনো অবদান রাখতে চান তাহলে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার লক্ষে কাজ করতে পারেন।


একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হতে গেলে কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন?


•  একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হতে গেলে আপনাকে অবশ্যই উচ্চশিক্ষিত হতে হবে এবং প্রচুর দক্ষতারও প্রয়োজন আছে।

•  প্রশাসনিক কর্মকর্তা হতে গেলে বিভিন্ন ধরণের রিফর্ম এবং শিক্ষানীতি তৈরিতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

•  প্রশাসনিক কর্মকর্তারা শিক্ষানীতি বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার সময় বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন সুতরাং আপনার এই সমস্যাগুলোকে সমাধানের দক্ষতা অবশ্যই থাকতে হবে।

আরো পড়ুন :- বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের চাকরিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের পোস্টটি পড়ুন।



৪. শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা

বাংলাদেশে মোট দশটি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে যাদের কাজ হলো শিক্ষার মান নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন উন্নতি সাধন করা। শিক্ষা বোর্ডগুলো বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে যেমন পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রম নির্ধারণ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা, শিক্ষার্থী নিবন্ধন, শিক্ষক নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ, শিক্ষার গুনগত মান মূল্যায়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন, বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে সহায়তা ইত্যাদি। শিক্ষা বোর্ড থেকে মূলত একটি নির্দিষ্ট এলাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। একটি শিক্ষা বোর্ডে বিভিন্ন ধরণের কর্মকর্তা থাকে এবং তাদের কাজও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সির্ধান্তগুলো নিয়ে থাকেন।


শিক্ষা বোর্ডে একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা হওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন?


•  আপনার অবশ্যই উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে এবং মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করতে হবে।

•  আপনার অবশ্যই প্রশাসনিক দক্ষতা থাকতে হবে যেমন শিক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন নিয়মনীতি তৈরী করা, উন্নত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কিভাবে দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে যোগ করা যায় এই সম্পর্কে ধারণা, শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের দক্ষতা ইত্যাদি।

•  শিক্ষা বোর্ডে উচ্চ পর্যায়ে কাজ করতে হলে আপনার কমিউনিকেশন স্কিল অবশ্যই অনেক ভালো হতে হবে এবং ভাষা স্পষ্ট হতে হবে ও শব্দ চয়ন সুন্দর হতে হবে।


৫. শিক্ষা পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ

শিক্ষা পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞদের কাজ হলো ছাত্র - ছাত্রীদের বইয়ের মাধ্যমে কি ধরণের বিষয়বস্তু পড়ানো হবে সেই দিকে লক্ষ্য রাখা। প্রত্যেকটি বইতে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়বস্তু নিয়ে পড়ানো হয়ে থাকে কিন্তু শিক্ষা পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য রাখেন যে শিক্ষার্থীদের যে সকল বিষয়গুলো পড়ানো হচ্ছে সেগুলো ভবিষতে কতটা কাজে আসবে এবং সেটির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী কী জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। শিক্ষা পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞরা আরও বিভিন্ন ধরণের কাজ করে থাকেন যেমন শিক্ষানীতির পরিকল্পনা তৈরী, শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নের পরিকল্পনা, পাঠ্যক্রম উন্নতির পরিকল্পনা ইত্যাদি। উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বহু পিছিয়ে আছে সুতরাং কিভাবে উন্নত দেশের মতো করে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকেও ডিজাইন করা যায় এই নিয়ে গবেষণা করাও শিক্ষা পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।


শিক্ষা পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ হতে কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন?


•  শিক্ষা পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ পজিশন সুতরাং আপনাকে অবশ্যই মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করতে হবে।

•  শিক্ষা পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞদের তথ্য ও ডেটা বিশ্লেষণের দক্ষতা প্রয়োজন, যাতে তারা বিভিন্ন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং সে ভিত্তিতে নীতি তৈরি করতে সক্ষম হতে পারেন।

•  অন্যদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে যাতে শিক্ষানীতি তৈরী বা কোনো কিছু সংশোধন করতে বেশি জটিলতার সম্মুখীন না হতে হয়।


উপসংহার

বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের জনপ্রিয় ৫ টি চাকরি নিয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষা খাত একটি বিশাল বড় খাত এখানে লক্ষ লক্ষ ছাত্র - ছাত্রী, হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাজার হাজার শিক্ষক যুক্ত আছেন। সরকার শিক্ষা খাতকে খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখে এবং হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে থাকে যার ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার চাকরির সৃষ্টি হয়। আপনার যদি শিক্ষকতার দিকে আগ্রহ থেকে থাকে তাহলে আপনি সেই লক্ষে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেন।
Tags

Post a Comment

0 Comments