১. মাইক্রোসফট
মাইক্রোসফট মূলত একটি সফটওয়্যার ভিত্তিক কোম্পানি। মাইক্রোসফট ১৯৭৫ সালে বিল গেটস এবং পল এলেনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমানে তারা ক্লাউড সেবা, গেমিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, হার্ডওয়্যার সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করছে। বর্তমানে মাইক্রোসফটের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হলেন সত্য নাদেলা। তিনি ২০১৪ সাল থেকে মাইক্রোসফটে সিইও হিসাবে নিযুক্ত রয়েছেন। ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী মাইক্রোসফটে মোট কর্মচারীর সংখ্যা ১৬০,০০০ জন ছিলেন যেটি বর্তমানে কম অথবা বেশি হতে পারে। মাইক্রোসফটে কর্মচারীদের বেতন বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন দেশ, শহর, আপনি কোন পদে নিযুক্ত ইত্যাদি তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাইক্রোসফটের একজন কর্মচারীর বেতন ৫০ হাজার ডলার থেকে ১ মিলিয়ন ডলারের উপর হতে পারে।
মাইক্রোসফটের শেয়ার বাজারের মূলধন কত?
২০২৪ সালের মে মাসের তথ্য অনুযায়ী মাইক্রোসফটের শেয়ার বাজারের মূলধন প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এই ব্যাপক মূলধন নিয়ে মাইক্রোসফট হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কোম্পানি। ২০১৪ সালে কোম্পানিটির শেয়ার বাজার মূলধন ছিল ৩৮০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আর বর্তমানে সেটি দাঁড়িয়েছে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। কোম্পানিটি মাত্র ১০ বছরে প্রায় ৭ গুন্ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির রেভিনিউ ছিল ২২৭ বিলিয়ন ডলার এবং মুনাফা ছিল ১০১ বিলিয়ন ডলার।
২. অ্যাপল
অ্যাপল কোম্পানিটি ১৯৭৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনো শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্টিভ জবস, স্টিভ ওজনিয়াক, এবং রোনাল্ড ওয়ায়ান এই তিনজন মিলে মূলত কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত করেন। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় তাদের মূল লক্ষ্য ছিল ব্যক্তিগত কম্পিউটারের উন্নতি সাধন করা। অ্যাপলের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোডাক্টটি হলো আই ফোন এবং এটি পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দামি ফোনগুলোর মধ্যে একটি। অ্যাপল ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি, হার্ডওয়্যার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইনভেস্ট করছে। অ্যাপলের বর্তমান সিইও হিসাবে নিযুক্ত আছেন টিম কুক। তিনি আগে অ্যাপলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে কাজ করেছেন। ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী অ্যাপলের মোট কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১,৫০,০০০ জন তবে বর্তমানে অনেক কর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন সুতরাং এই সংখ্যা এখন কম হতে পারে। অ্যাপলের কর্মীদের বেতন বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে তবে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কর্মী সাধারণত ৫০ হাজার ডলার থেকে মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকেন।
অ্যাপলের শেয়ার বাজারের মূলধন কত?
২০২৪ সালের মে মাসের তথ্য অনুযায়ী অ্যাপলের শেয়ার বাজারের মূলধন প্রায় ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এই বিশাল মূলধন নিয়ে অ্যাপল পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ কোম্পানি। ২০১৪ সালে কোম্পানিটির মার্কেট ক্যাপ ছিল প্রায় ৬৫০ বিলিয়ন ডলার আর বর্তমানে সেটা দাঁড়িয়েছে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলারে। মাত্র ১০ বছরে কোম্পানিটি প্রায় ৪ গুনের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির মোট রেভিনিউ ছিল ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার এবং মোট মুনাফা ছিল ১২১ বিলিয়ন ডলার।
৩. এনভিডিয়া
এনভিডিয়া বর্তমানে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তারা মূলত গ্রাফিক্স প্রসেসর, চিপ সেট, গেমিং কনসোল, উন্নত মানের সেমিকন্ডাক্টর সহ বহু কিছু বানিয়ে থাকে। প্রায় সকল ইলেকট্রিক ডিভাইসে সেমিকন্ডাক্টরের প্রয়োজন হয় এবং বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে যার ফলে এনভিডিয়ার মার্কেট ক্যাপও বিগত দুই বছরে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এনভিডিয়ার সিইও হিসাবে নিযুক্ত আছেন জেনসেন হুয়াং। তিনি পূর্বে কোম্পানিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বর্তমানে এনভিডিয়ার আর্টিফিশিয়াল চিপ খুবই জনপ্রিয় হয়েছে এবং উন্নতমানের এ আই প্রযুক্তিগুলোতে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এনভিডিয়াতে মোট ১৯,০০০ কর্মচারী রয়েছেন। যেহেতু উন্নত প্রযুক্তির কাজগুলো জটিল হয়ে থাকে সেহেতু কর্মচারীদের বেতনও তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়ে থাকে।
এনভিডিয়ার শেয়ার বাজারের মূলধন কত?
২০২৪ সালের মে মাসের তথ্য অনুযায়ী এনভিডিয়ার শেয়ার বাজারের মূলধন প্রায় ২.১ ট্রিলিয়ন ডলার। এটি বর্তমানে মাইক্রোসফট এবং অ্যাপলের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কোম্পানি। অবিশ্বাস্য হলেও কোম্পানিটি গত ১ বছরে ২ গুনের বেশি প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে। ২০১৪ সালে কোম্পানিটির মার্কেট ক্যাপ ছিল মাত্র ১১ বিলিয়ন ডলার আর বর্তমানে কোম্পানিটির মার্কেট ক্যাপ ২.১ ট্রিলিয়ন ডলার। তার মানে কোম্পানিটি মাত্র ১০ বছরে ২০০ গুনের বেশি প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে যেটি শেয়ার মার্কেটের ইতিহাসে একটি অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ২০২৩ সালে কোম্পানিটি ৬১ বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ করেছে এবং ৩৪ বিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন করেছে।
আরো পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী কোম্পানিগুলো সম্পর্কে জানতে নিচের পোস্টটি পড়ুন।
৪. গুগল
গুগল হলো বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। সের্গেই ব্রিন এবং ল্যারি পেইজ ১৯৯৮ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত করেন। গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি হলো আলফাবেট। গুগলের প্রধান অফিস যুক্তরাষ্টের ক্যালিফর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত। গুগলের বিভিন্ন প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস রয়েছে যেমন গুগল সার্চ, গুগল ক্রোম, গুগল মেইল, গুগল ড্রাইভ, গুগল ম্যাপস ইত্যাদি এগুলো সমগ্র বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবও গুগল দ্বারা পরিচালিত এবং গুগলের অপারেটিং সিস্টেম এন্ড্রোইড বিশ্বের বিলিয়ন মোবাইল ফোনে ইনস্টল আছে। গুগল বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজিতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে। গুগলের বর্তমান সিইও হিসাবে নিযুক্ত আছেন সুন্দর পিচাই। সর্বশেষ ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী গুগলে মোট ১,৬০,০০০ কর্মচারী কাজ করেন। গুগলে কর্মচারীদের বেতন ৫০ হাজার ডলার থেকে মিলিয়ন ডলারের উপর হয়ে থাকে।
গুগলের শেয়ার বাজারের মূলধন কত?
২০২৪ সালের মে মাসের তথ্য অনুযায়ী গুগলের শেয়ার বাজারের মূলধন প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম কোম্পানি। টেকনোলজির অগ্রগতির সাথে সাথে গুগলের মার্কেট শেয়ারও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে কোম্পানিটির মার্কেট ক্যাপ ছিল ৩৬০ বিলিয়ন ডলার আর বর্তমানে সেটি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলারে। মাত্র ১০ বছরে কোম্পানিটি ৪ গুনের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী কোম্পানিটির মোট রেভিনিউ ছিল ৩০৭ বিলিয়ন ডলার এবং কোম্পানিটির মোট মুনাফা ছিল ৮৬ বিলিয়ন ডলার।
৫. মেটা
মেটা মূলত একটি সোশ্যাল মিডিয়া ভিত্তিক কোম্পানি। কোম্পানিটির পূর্ববর্তী নাম ফেইসবুক ছিল কিন্তু ২০২১ সালে নাম পরিবর্তন করে মেটা রাখা হয়। মার্ক জুকারবার্গ এবং তাঁর অন্যান্য সহযোগীরা মিলে ২০০৪ সালে ফেইসবুক প্রতিষ্ঠিত করেন। মেটার প্রধান অফিস যুক্তরাষ্টের ক্যালিফর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত। মেটার বহুল জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলো হলো ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটস্যাপ, মেসেঞ্জার ইত্যাদি এই সকল সোশ্যাল মিডিয়াগুলো সমগ্র পৃথিবীজুড়ে খুবই জনপ্রিয়। মেটার বর্তমান সিইও হিসাবে নিযুক্ত আছেন মার্ক জুকারবার্গ। মেটা বর্তমানে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজিতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মেটার মোট কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ৬০,০০০ জন। মেটার কর্মচারীদের বেতন বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে তবে সাধারণত তাদের বেতন ৪৫ হাজার ডলার থেকে মিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে।
মেটার শেয়ার বাজারের মূলধন কত?
২০২৪ সালের মে মাসের তথ্য অনুযায়ী মেটার শেয়ার বাজারের মূলধন প্রায় ১.১ ট্রিলিয়ন ডলার। মেটা তার বেশিরভাগ ইনকাম মূলত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে করে থাকে। বিগত কয়েক বছরে সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে আর ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটস্যাপে বিলিয়ন মানুষের বেশি যোগ হয়েছে এবং মেটার ইনকামও প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে কোম্পানিটির মার্কেট ক্যাপ ছিল ২১৬ বিলিয়ন ডলার আর যেটি বর্তমানে ১.১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। মাত্র ১০ বছরে কোম্পানিটি ৪ গুনের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৩ সালে কোম্পানিটি ১৩৫ বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ করেছে এবং ৪৮ বিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন করেছে।
উপসংহার
বর্তমান শেয়ার বাজারের মূলধনের ভিত্তিতে বিশ্বের সেরা পাঁচটি টেক কোম্পানি নিয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে শেয়ার বাজারে সকল কোম্পানির মার্কেট ক্যাপ সব সময় পরিবর্তন হতে থাকে সুতরাং ভবিষতে অন্য কোনো কোম্পানিও এই জায়গা দখল করে নিতে পারে। বর্তমানে উপরের পাঁচটি কোম্পানির মোট মার্কেট ক্যাপ ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি এবং ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী এই কোম্পানিগুলো সমগ্র পৃথিবীজুড়ে সরাসরিভাবে ৬ লক্ষ এর বেশি জব তৈরী করেছে। প্রত্যেকটি কোম্পানি মার্কিন যুক্তরাষ্টের।