বিশ্বের সেরা পাঁচটি ডিফেন্স কোম্পানি কী কী?

যে সকল কোম্পানি সামরিক এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে তাদেরকে ডিফেন্স কোম্পানি বলা হয়। একটি ডিফেন্স কোম্পানি সামরিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত দিক সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের বড় বড় ডিফেন্স কোম্পানিগুলো নিজেদের দেশ রক্ষার জন্য অস্ত্র বানানো সহ মিত্র দেশগুলোকে বিভিন্ন অস্ত্র-সরঞ্জাম বিক্রয় করে থাকে এবং এগুলো বিক্রয় করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। আজকের এই পোস্টটিতে বিশ্বের সেরা ৫ টি ডিফেন্স কোম্পানি নিয়ে আলোচনা করা হবে।


বিশ্বের সেরা পাঁচটি ডিফেন্স কোম্পানি



১. Lockheed Martin

Lockheed Martin একটি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ডিফেন্স এবং মহাকাশ গবেষণা কারী কোম্পানি। Lockheed Corporation এবং Martin Marietta এই দুইটি কোম্পানি একত্রিত হয়ে মূলত Lockheed Martin গঠিত হয়েছে।
Lockheed Corporation মূলত ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারা প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন যুদ্ধবিমান তৈরি করে। 
Martin Marietta কোম্পানিটি ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারা রকেট ও বিভিন্ন মহাকাশযান তৈরির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৯৫ সালে এই দুইটি কোম্পানি একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিফেন্স ও মহাকাশ সংস্থার জন্ম হয়। Lockheed Martin বিভিন্ন অত্যাধুনিক এবং উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তির সাথে যুক্ত আছে যেমন :

F-35 Lightning II: এটি পঞ্চম প্রজন্মের পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন যুদ্ধবিমান। Mack ১.৬ এ ঘন্টায় এটির সর্বোচ্চ গতি ১৯৬০ কিলোমিটার।

F-22 Raptor: এটি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এয়ার ক্রাফট। এটি বর্তমান সময়ের অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে ধোঁকা দিয়েও শত্রুর দেশে প্রবেশ করতে পারে।

Orion Spacecraft: এটি একটি উন্নত প্রযুক্তির মহাকাশযান। এটি মহাকাশচারীদের মহাকাশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিশনে সহায়তা করে।

এছাড়াও আরো বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির প্রোজেক্টের সাথে Lockheed Martin জড়িত আছে। শুধু যুদ্ধবিমান এবং মহাকাশের ক্ষেত্রেই নয় বরং সাইবার নিরাপত্তা সহ আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোম্পানিটি কাজ করে যাচ্ছে। 

Lockheed Martin বিশ্বের ৫০ টিরও বেশি দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। যেহেতু এটি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোম্পানি সেহেতু কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোকে বিভিন্ন ধরনের উন্নত প্রযুক্তির সরঞ্জাম বিক্রয় করে থাকে। কোম্পানিটি সবচেয়ে বেশি সরঞ্জাম বিক্রয় করে থাকে সৌদি আরব, জাপান, অস্ট্রেলিয়া সহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কিছু দেশে। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী কোম্পানির রেভিনিউ ছিল ৭০ বিলিয়ন ডলার এবং মুনাফা ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কোম্পানিটিতে ১ লক্ষ ১৪ হাজার মানুষ কর্মরত আছেন।


২. Raytheon Technologies Corporation

Raytheon Technologies Corporation কোম্পানিটি ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত Raytheon Company এবং United Technologies Corporation একত্রিত হয়ে Raytheon Technologies Corporation প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৯২২ সালে Raytheon Company প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উন্নতমানের রাডার সিস্টেম বানানোর মধ্য দিয়ে অনেক সুনাম অর্জন করে। Raytheon এর আবিষ্কৃত Patriot Missile Defence System বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। এটি বর্তমানে আকাশ সীমাকে রক্ষা করার জন্য বহু দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে।
১৯৩৪ সালে United Technologies Corporation প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটি মূলত বিমানে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক ইঞ্জিন, এলিভেটর, হেলিকপ্টার সহ বিভিন্ন জিনিস বানিয়ে থাকে। কোম্পানিটি ২০২০ সালে Raytheon এর সাথে যুক্ত হয়ে যায়। Raytheon Technologies Corporation বর্তমানে যাত্রীবাহী বিমান ও যুদ্ধবিমান শিল্পে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে, মহাকাশ গবেষণায়, সাইবার টেকনোলজি সহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির প্রজেক্টের সাথে যুক্ত আছে। তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও উন্নত মানের তিনটি প্রজেক্ট হল:-

Patriot Missile Defense System: এটি বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম গুলোর মধ্যে অন্যতম। কোন দেশের আকাশ সীমাকে রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি প্রযুক্তি। 

Tomahawk Cruise Missile: এটি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র। যুদ্ধজাহাজ বা সাবমেরিনে এটি ব্যবহার করা যায় এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা যায়।

Aegis Combat System: এটি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

উপরের উল্লেখিত হাইটেক প্রযুক্তি গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন উন্নত মানের প্রযুক্তির জন্য Raytheon Technologies Corporation বিখ্যাত।

বিশ্বজুড়ে কোম্পানিটি ৪০ টিরও বেশি দেশে তাদের বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রয় করে। দেশগুলির বেশিরভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুসুলভ দেশ যেমন সৌদি আরব, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, পোল্যান্ড, ইসরাইল ইত্যাদি। কোম্পানিটির সর্বোচ্চ সেল হওয়া প্রোডাক্টগুলোর মধ্য রয়েছে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, উন্নত প্রযুক্তির মিসাইল, রাডার, বিমানের ইঞ্জিন ইত্যাদি। ২০২৩ সালে কোম্পানিটি ৭৪ বিলিয়ন ডলারের সেল করেছে এবং ৫ বিলিয়ন ডলারের মুনাফা অর্জন করেছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী কোম্পানিটিতে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার কর্মচারী রয়েছে। কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো তাদের প্রযুক্তি গুলোর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে প্রযুক্তি গুলোকে আরো অত্যাধুনিক করে তোলা।


৩. Northrop Grumman Corporation

১৯৯৪ সালে Northrop Corporation এবং Grumman Corporation একত্রিত হয়ে Northrop Grumman Corporation প্রতিষ্ঠিত হয়।
Northrop Corporation ১৯৩৯ সালে Jack Northrop এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটি শুরুর দিকে সামরিক বিমানের ডিজাইন এবং বিমানের বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোম্পানিটির P-61 Black Widow যুদ্ধবিমানটি ব্যাপক সফলতা অর্জন করে এবং এটি ছিল ওই সময়ের সেরা একটি যুদ্ধ বিমান।
Grumman Corporation প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে।  কোম্পানিটি উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান নির্মাণ করে প্রচুর সুনাম অর্জন করেছে। Top Gun চলচ্চিত্রে কোম্পানিটির F-14 Tomcat বিমানটি প্রচুর প্রচারণা পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক বিমান নির্মাণ করে।
১৯৯৪ সালে Northrop এবং Grumman এই দুইটি শক্তিশালী কোম্পানি একত্রিত হয় এবং পরবর্তীতে সামরিক ও বেসামরিক বিমান নির্মাণ খাতে কোম্পানিটি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখে। কোম্পানিটির বহু জনপ্রিয় কিছু প্রজেক্ট নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো: 

B-2 Spirit Stealth Bomber: এটি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির শক্তিশালী বোম্বার। রাডার দিয়েও এটি শনাক্ত করার সম্ভাবনা খুবই কম। এটি অনেক উচ্চতায় উড়তে সক্ষম এবং পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম। বোম্বারটি উচ্চ ঝুঁকির গুরুত্বপূর্ণ মিশনে ব্যবহারের জন্য উপযোগী।

RQ-4 Global Hawk: এটি হলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন UAV (Unmanned Aerial Vehicle) । এটি মূলত আকাশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নজরদারি চালিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে। UAV গুলো মূলত দূর থেকে রিমোট কম্পিউটারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যেহেতু এটিতে কোন মানুষ থাকে না সেহেতু কোন সৈনিকের প্রান যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না।

James Webb Space Telescope: এটি হলো বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আধুনিক একটি টেলিস্কোপ। NASA, European Space Agency, Canadian Space Agency মিলে এই প্রজেক্টটিতে কাজ করেছে। মহাকাশ গবেষণায় JWST এর গুরুত্ব অপরিসীম। Northrop Grumman Corporation প্রজেক্টটি ডেভেলপ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপরে উল্লেখিত বহু জনপ্রিয় প্রজেক্টগুলো ছাড়াও Northrop Grumman Corporation আরো বহু প্রজেক্টে কাজ করেছে। বর্তমানে কোম্পানিটি মহাকাশ প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সাইবার নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে।
Northrop Grumman Corporation তাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু কোম্পানিকে কিনে নিয়েছে যেমন Northrop Grumman Westinghouse Electronic Systems Group, Litton Industries, TRW Inc, Orbital ATK । এই কোম্পানিগুলোকে অধিগ্রহণের মাধ্যমে তারা রাডার এবং সেন্সর সিস্টেমের উন্নয়ন, অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ, নৌবাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, মহাকাশ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে।


আরো পড়ুন: Pegasus সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের পোস্টটি পড়ুন।



৪. Boeing

Boeing মূলত বাণিজ্যিক বিমানের জন্য সুপরিচিত হলেও কোম্পানিটি প্রতিরক্ষা, মহাকাশ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত আছে। Boeing কোম্পানিটি ১৯১৬ সালে উইলিয়াম বোয়িংয়ের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে কোম্পানিটি Pacific Aero Products Co নামে পরিচিত ছিল পরবর্তীতে ১৯১৭ সালে কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন করে Boeing Airplane Company রাখা হয়। বোয়িং সর্বপ্রথম আধুনিক বাণিজ্যিক বিমান পরিষেবা চালু করে এবং তারপর থেকে কোম্পানিটি একের পর এক সফলতার মুখ দেখতে থাকে। বোয়িং শুধুমাত্র বেসামরিক বিমান নয় বরং সামরিক বিমানও নির্মাণ করে থাকে যেমন F-15, F/A-18, Apache AH64 ইত্যাদি। মহাকাশ এবং সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বোয়িং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বোয়িংয়ের কিছু জনপ্রিয় সামরিক প্রজেক্ট সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:

F-15 Eagle: এটি একটি উন্নত প্রযুক্তির ফাইটার জেট। উচ্চগতিসম্পন্ন এবং বহু উচ্চতায় যুদ্ধ করার জন্য এটিকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এই ফাইটার জেটটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইসরাইল, সৌদি আরব, কাতার এই পাঁচটি দেশ ব্যবহার করে।

F/A-18 Hornet: এটি একটি আধুনিক ফাইটার জেট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিশনে এটি ব্যবহার করে থাকে। এটির বিশেষত্ব হলো জেটটিতে দুইটি শক্তিশালী ইঞ্জিন আছে এবং এটি সুপারসনিক গতিতে চলতে পারে এছাড়াও বৈরী আবহাওয়াতেও গুরুত্বপূর্ণ মিশন চালিয়ে যেতে পারে। এটির বর্তমান বাজার মূল্য ৬৫ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

AH-64 Apache: এটি একটি চার-ব্লেডের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টারটি উন্নত প্রযুক্তির হওয়ার কারণে যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে বিশেষ ধরনের সুবিধা প্রদান করে। বর্তমানে হেলিকপ্টারটির দাম ৫২ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল সহ পৃথিবীর বহু দেশ হেলিকপ্টারটি তাদের সেনাবাহিনীর জন্য ব্যবহার করছে।


উপরের উল্লেখিত প্রজেক্ট গুলো ছাড়াও বোয়িং আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের সাথে যুক্ত আছে। বেসামরিক বিমান, সামরিক বিমান, সামরিক হেলিকপ্টার, উন্নত প্রযুক্তির সেন্সর এবং রাডার সিস্টেম, সাইবার নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বোয়িং ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির রেভিনিউ ছিল ৭৬ বিলিয়ন ডলার কিন্তু কোন মুনাফা অর্জন করতে পারেনি। কোম্পানিটি বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত যার ফলে বিগত কয়েক বছর ধরে তাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে কিন্তু বিভিন্ন সমস্যা থাকার পরও বোয়িং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।


৫. BAE Systems

এটি একটি ব্রিটিশ কোম্পানি তারা মূলত নৌবাহিনী এবং স্থল বাহিনীর জন্য বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম নির্মাণ করে থাকে। ১৯৯৯ সালে British Aerospace এবং Marconi Electronic Systems একত্রিত হয়ে BAE Systems কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটি বর্তমানে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে যেমন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ইত্যাদি। কোম্পানিটির প্রধান সদর দপ্তর যুক্তরাজ্যের Farnborough শহরে অবস্থিত। কোম্পানিটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রজেক্ট নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো:

Eurofighter Typhoon: এটি আধুনিক প্রযুক্তির ফাইটার জেট। BAE Systems, Airbus, এবং Leonardo এর যৌথ উদ্যোগে এটি তৈরি করা হয়। যুদ্ধবিমানটি অত্যন্ত গতিসম্পন্ন এবং অত্যাধুনিক সেন্সর সিস্টেম সহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র বহন করতে পারার জন্য এটি খ্যাতিসম্পন্ন। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি সহ বিভিন্ন দেশের বিমানবাহিনী এটি ব্যবহার করে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য এই শক্তিশালী যুদ্ধবিমানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Astute Class Submarines: এটি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নিউক্লিয়ার পাওয়ার সাবমেরিন। এই সাবমেরিনটি দীর্ঘ সময় জলের নিচে থাকতে পারে এবং শব্দ কম করে যার ফলে সাবমেরিনটিকে সনাক্ত করা মুশকিল হয়ে যায়। যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনী এই সাবমেরিনটি ব্যবহার করে। জলের গভীর থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ মিশনের জন্য সাবমেরিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।

Queen Elizabeth Class Aircraft Carriers: এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বিমানবাহী রণতরী। এটি একসাথে ৪০ টি বিমান বহন করতে পারে। রণতরীটিতে আছে অত্যাধুনিক সেন্সর এবং কমান্ড সিস্টেম। যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনীর জন্য এটির গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন যুদ্ধে অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো মিশনে এটি ব্যবহার করা হয়।

উপরের উল্লেখিত প্রজেক্ট গুলো ছাড়াও BAE Systems সাইবার নিরাপত্তা, ইলেকট্রিক ওয়ারফেয়ার, মহাকাশ গবেষণায় ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ইলেকট্রিক ওয়ারফেয়ারের মাধ্যমে মূলত শত্রুর রাডার সহ বিভিন্ন প্রযুক্তিকে বিভ্রান্ত করা সম্ভব হয়। যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে কোম্পানিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

Post a Comment

0 Comments