১. আপওয়ার্ক
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য আপওয়ার্ক বহু জনপ্রিয় একটি মার্কেটপ্লেস। আপওয়ার্কের যাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে। এখানে আপনি একজন ক্লায়েন্ট হিসাবে অথবা একজন সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে জয়েন হতে পারেন। আপনি যদি আপওয়ার্ক থেকে মোটা অংকের অর্থ আয় করতে চান তাহলে আপনাকে কোন একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এখানে আপনি দুইভাবে কাজ পেতে পারেন। প্রথমত আপনি গিগ বানিয়ে আপনার সেবার ধরণ সম্পর্কে আপনার প্রোফাইলে পোস্ট করতে পারবেন এবং সেবাটির জন্য কি পরিমান অর্থ আপনি নিবেন সেটিও উল্লেখ করতে পারবেন তারপর কোন ক্লায়েন্টের যদি আপনার গিগটি পছন্দ হয় তাহলে সে আপনার সেবাটি ক্রয় করবে। দ্বিতীয়ত আপনি সার্চ করে কাজ খুঁজে বের করতে পারবেন যেমন বহু ক্লায়েন্ট বিভিন্ন কাজের জন্য পোস্ট দিয়ে থাকে তখন সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনার যদি মনে হয় আপনি কাজটি করতে পারবেন তাহলে আপনি সেখানে কমেন্ট করে ক্লায়েন্টকে জানাতে পারেন এবং পরবর্তীতে ক্লায়েন্টের যদি আপনার কমেন্ট এবং প্রোফাইলটি পছন্দ হয় তাহলে সে আপনাকে কাজটি দিয়ে দিবে।
আপওয়ার্ক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য নিচে দেওয়া হল।
• আপওয়ার্কে কাজ শুরু করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই কাজটির বিষয়ে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
• ক্লায়েন্টের কাছে নির্দিষ্ট সময়ের আগে কাজটি জমা দিতে হবে।
• আপনার কাজের মান অবশ্যই ভালো হতে হবে যাতে সেই ক্লায়েন্ট পরবর্তীতে আবার আপনাকে কাজ দেয়।
• আপনার কমিউনিকেশন স্কিল অবশ্যই ভালো হতে হবে যাতে কাজটি সঠিকভাবে বুঝতে সুবিধা হয়।
২. ফাইবার
নতুনদের জন্য ফাইবার খুবই জনপ্রিয় একটি মার্কেটপ্লেস। ফাইবার ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সার উভয়ের জন্য তৈরি করা হয় যাতে ক্লায়েন্ট খুব সহজেই অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে নিতে পারে এবং ফ্রিল্যান্সাররা যেন সহজেই অনলাইন থেকে আয় করতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় ইসরাইলের তেল আবিব শহরে অবস্থিত। এই প্ল্যাটফর্মে কাজের বিনিময়ে প্রাথমিকভাবে ৫ ডলার থেকে শুরু করে উচ্চমূল্যে সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। ক্লায়েন্টরা বিভিন্ন পর্যালোচনা, রেটিং এবং রিভিউ এর ভিত্তিতে তাদের পছন্দমত ফ্রিল্যান্সার খুঁজে নিতে পারে। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী ফাইবারে মোট ৪০ লক্ষের বেশি সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছে এবং তারা ৫৫০ টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। ফাইবারে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে যুক্ত হতে হলে প্রথমত একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হবে এবং আপনার নিজের সম্পর্কে ও আপনার দক্ষতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সেখানে প্রদান করতে হবে। দ্বিতীয়ত একটি গিগ তৈরি করতে হবে এবং সেখানে আপনি কি ধরনের সেবা প্রদান করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে হবে তারপর আপনি আপনার সেবাটির জন্য কি পরিমান অর্থ নিতে আগ্রহী সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত জানাতে হবে। অবশেষে কোন ক্লায়েন্ট যদি আপনার গিগটি পছন্দ করে থাকে তাহলে সে একটি প্রজেক্টে আপনাকে কাজ দেবে।
ফাইবার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে দেওয়া হল।
• আপনি নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জয়েন করলে কাজ পাওয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
• প্রথমত একটি কাজের উপর আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে তারপরে ফাইবারে যোগ দেওয়ার কথা চিন্তা করতে হবে কারণ অদক্ষ ফ্রিল্যান্সার বেশিরভাগ সময় কাজ পান না এবং কাজ পেলেও ঠিকমতো করতে পারেন না যার কারণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
• আপনার কাজটি অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে করতে হবে কারণ ক্লায়েন্ট যদি আপনাকে খারাপ রেটিং ও রিভিউ দেয় তাহলে সেটি আপনার প্রোফাইলের জন্য বিপদজনক হবে এবং ভবিষ্যতে কাজ পেতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
৩. ফ্রিল্যান্সার.কম
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য ফ্রিল্যান্সার.কম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মার্কেটপ্লেস। ফ্রিল্যান্সার.কম ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্রিল্যান্সার.কম এর প্রধান সদরদপ্তর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে অবস্থিত। ২০২৪ সালের মে মাসের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ৭৩ লাখের বেশি মানুষ এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত আছে। এখানে ওয়েব ডেভেলপার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, ডিজিটাল মার্কেটিং, ডাটা এন্ট্রি সহ বিভিন্ন ধরনের পেশায় এখানে কাজ পাওয়া যায়। আপনি যদি কোন একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে এই মার্কেটপ্লেসটিতে যুক্ত হন তাহলে অবশ্যই মোটা অংকের অর্থ আয় করতে পারবে। এখানে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে মার্কেটপ্লেসটিতে একটি একাউন্ট খুলতে হবে তারপর আপনার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সেখানে প্রদান করতে হবে এবং আপনার দক্ষতা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে হবে।
ফ্রিল্যান্সার.কম এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
• বর্তমানে ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা অত্যাধিক হওয়ায় নতুনদের জন্য কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
• ফ্রিল্যান্সার.কম এ প্রথমদিকে কাজ পাওয়া কঠিন হলেও একবার কিছু প্রজেক্টে কাজ করতে পারলে তখন ধীরে ধীরে নতুন নতুন প্রজেক্টে কাজ আসতে থাকে।
• বর্তমানে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি হওয়ায় নতুন ফ্রিল্যান্সাররা কাজ পাওয়ার জন্য নিজেরদের পারিশ্রমিক প্রচুর কমিয়ে রাখে যার ফলে কাজের তুলনায় তারা কম পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে।
• নতুন ফ্রিল্যান্সাররা প্রথমদিকে পারিশ্রমিক তুলনামূলক ভাবে কম পেলেও পরবর্তীতে যখন প্রোফাইলে ভালো রেটিং এবং রিভিউ বেশি হবে তখন আপনি বেশি পারিশ্রমিক নিয়েও অনেক প্রজেক্টে কাজ করতে পারবেন।
আরো পড়ুন :- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে কীভাবে অর্থ উপার্জন করবেন বিস্তারিত জানতে নিচের পোস্টটি পড়ুন।
৪. টপটাল
টপটাল বিশ্বের অন্যতম একটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস। এই প্লাটফর্মটির মাধ্যমে আপনি বিশ্বের যে কোন প্রান্তে বসে রিমোট জব করতে পারবেন। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। টপটালের প্রধান সদরদপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। এখানে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো ফ্রিল্যান্সারদের বিভিন্ন কাজ অথবা চাকরি দিয়ে থাকে। এখানে সফটওয়্যার ডেভেলপার, ডিজাইনার, ফাইন্যান্স এক্সপার্ট, প্রোডাক্ট ম্যানেজার, প্রজেক্ট ম্যানেজার সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কাজ পাওয়া যায়। প্লাটফর্মটি থেকে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এক্সপার্টদের বিভিন্ন কাজের অফার দিয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে তাদের যাচাই-বাছাই করে কোম্পানিতে কাজের সুযোগ দিয়ে থাকে।
টপটালের কিছু সুবিধা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
• আপনি প্লাটফর্মটির মাধ্যমে ঘরে বসেই বড় বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরি সুযোগ পাবেন।
• আপনি কোন নির্দিষ্ট অফিস ছাড়া পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে বসে কাজ করতে পারেন।
• টপটালের বেশিরভাগ ক্লাইন্ট উন্নত দেশে অবস্থিত সুতরাং আপনি যদি একটি চাকরি পেতে সক্ষম হন তাহলে আপনার বেতন অনেক বেশি হবে।
৫. গুরু.কম
গুরু.কম নতুনদের জন্য একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম। ১৯৯৮ সালে গুরু.কম প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত। এই প্লাটফর্মটিতে ১৫ লক্ষের অধিক মানুষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। এখানে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার জব পোস্ট করা হয়। গুরু.কম এ একটি প্রজেক্ট এর জন্য আপনি পাঁচ ডলার থেকে শুরু করে হাজার ডলারের অধিক আয় করতে পারবেন। অন্য সকল প্লাটফর্মের মতই এখানেও নতুন হিসেবে প্রজেক্ট পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে আপনি যদি আপনার কাজ মনোযোগ দিয়ে করতে পারেন এবং ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ভালো রিভিউ পেয়ে থাকেন তাহলে ভবিষ্যতে আপনার জন্য কাজ পাওয়া ধীরে ধীরে সহজ হবে। সর্বনিম্ন ২৫ ডলার হলে আপনি এখান থেকে টাকা তুলতে পারবেন। প্লাটফর্মটিতে জনপ্রিয় সকল পেমেন্ট মেথডগুলো যোগ করা আছে যেমন পেপাল, চেক, ক্রেডিট কার্ড, ওয়ার ট্রান্সফার ইত্যাদি।
উপসংহার
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য উপরে উল্লেখিত পাঁচটি মার্কেটপ্লেস ছাড়াও আরো বহু মার্কেটপ্লেস রয়েছে। তবে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসগুলো নিয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে প্রথমত আপনাকে একটি বিষয়ের উপর ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং পরবর্তীতে মার্কেটপ্লেস গুলোতে জয়েন করতে হবে ও সময় দিতে হবে তারপর পরবর্তীতে কোন কাজ আসলে সেটি অনেক মনোযোগ দিয়ে করতে হবে এবং ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ভালো একটি রিভিউ নিতে হবে। এইভাবে আপনি কাজ করতে থাকলে অবশ্যই একদিন ভালো একটি পজিশনে উন্নীত হবেন।